এক কাপ চা না খেলে সকালের ঘুমই ভাঙতে চায় না। সকাল হোক বা বিকাল- কারো কারোর আবার কয়েক ঘন্টা অন্তর অন্তর চা খাওয়ার জন্য মনটা আনচান করে। ব্রেকফাস্ট হোক বা টিফিন টাইম, কাজের ফাঁকে, ক্লান্তি দূর করতে, আড্ডার মাঝে সাথে আর কিছু থাক না বা  থাক ১/২ কাপ চা ছাড়া যেন ঠিকঠাক জমে না কিছুই। কেউ দুধ চা খেতে পছন্দ করেন তো কেউ লিকার চা। খুবই সাধারণ হলেও চা আমাদের অলটাইম ফেভারিট।

চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা Advantages and disadvantages of drinking tea

জেনে অবাক হতে পারেন যে চা বিকল্পভাবে অনেক শারীরিক সমস্যার প্রভাব এবং তাদের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে। এটি মাথায় রেখে, আমরা স্টাইলক্রেজের এই নিবন্ধে চায়ের সব উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। সাথে সাথে- এখানে চায়ের ব্যবহার এবং অতিরিক্ত চা খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলিও ব্যাখ্যা এবং এর কার্যকারিতা করার চেষ্টা করব।

চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চা এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চা ছাড়া যেন আমরা আমাদের জীবন কল্পনাও করতে পারি না। সকাল এবং বিকেলের নাস্তার সাথে চা না হলেই যেন নয়। এমনকি অনেকে রাতেও চা পান করেন। যেহেতু চা আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের নিত্যসঙ্গী, সেহেতু এই চা আমাদের স্বাস্থের জন্য কতটুকু উপকারী এবং কতটুকু ক্ষতি করছে তা জানা অবশ্যম্ভাবী। এবার জেনে নিই চা পানের আসল উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে ।

গ্রিন টি/সবুজ চাঃ

 স্বাস্থ্য সচেতন অনেকে ফিগার ঠিক রাখতে  গ্রীন টি-এর প্রতি বেশি ঝুঁকছেন৷ গ্রীন টি প্রথমে ছিলো ওষুধ তারপর পানীয়তে পরিণত হয়েছে৷ এই চা কেবল পিপাসাই মেটায় না দূর করে ক্লান্তিও৷ জাপানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে দুই কাপের বেশি গ্রীন টি পান করেন তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি ফিট৷ সবুজ চায়ে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা প্রতিটি মানুষের শরীরেই প্রয়োজন৷ নিয়মিত সবুজ চা পান করলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও কিছুটা কমিয়ে দেয়৷

আরও কিছু উপকারিতা:

১. কিডনি রোগের জন্য উপকারী।
২. হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
৩. পোকামাকড়ের দ্বারা আগত স্থানে যদি  চুলকায় ও ফুলে যায় তাহলে সবুজ চায়ের পাতা দিয়ে ঢেকে দিলে আরাম বোধ- এবং উপকার পাওয়া যায়।
৪. রক্তে কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমায়।
৫. ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।
৬. এর পরিমিত লিকারের মাধ্যমে দাঁতের ক্ষয়রোধ ও মাড়ি শক্ত-মজবুত করে।
৭. কাটা জায়গার জন্য গ্রিন টি লিকার লাগালে প্রতিরক্ষা- রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
৮. নিয়মিত এই চা পানে রক্ত চলাচল সচল হয়৷
৯. পেট পরিষ্কার করে আর মস্তিষ্ককে করে সচেজ সচল ৷

আদা চাঃ

আদা চা  নামে নহে -কাজে খুবই উপকারী। বিশেষ করে সর্দি-কাশির-ব্যথার ক্ষেত্রে এটি ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

১. বমি ভাব দূর করে।
২. গরম আদা চা গলগলা দিয়ে পান করলে গলাব্যথা কমে যায়।
৩. এসিডিটির বিরুদ্ধেও আদা চা কাজ করে।
৪. আদা  যুক্ত চায়ের দ্বারা হজমের সমস্যা কমে।

দুধ চাঃ

 অবসাদ ও ক্লান্তিতে খুবই কার্যকর। নিয়মিত চা ও কফি পানে হৃদরোগের ঝুঁকি কিছুটা কমে। চা বা কফি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৫ গুণ কমিয়ে দেয়। এছাড়া এ সময় স্ট্রোকের কারন জনিত রোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়েনা বলে এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

চা সম্পর্কে ভুল ধারণাঃ

চা সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা আছে বা অভ্যাস দেখা যায়- যেমনঃ ঘুমের আগে চা খেলে রাতে ঘুম আসে না, চা লিভারের ক্ষতি করে, চা চামড়া কালো করে - এই রকম। যদিও চা খেলে গায়ের রং কালো হবে না। কারণ চা এর  সাথে ত্বকের রঙ নির্ভর করে ম্যালানোসাইট কোষের সক্রিয়তার উপর । চা পান করলে লিভারের কোন ক্ষতি হয় না । তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, অতিরুক্ত চা পান করলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হবে। যেমনঃ অবসাদ আসতে পারে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

সঠিক সময়ে চা পানঃ

আমরা সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবারের পরেও চা বা কফি পান করি। অনেকেরই এটা প্রতিদিনের অভ্যাস। কেননা চা, কফি পান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে এই অভ্যাস স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

সঠিক সময়ে বা উপায়ে চা পান না করলে তা শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটায়। উপকারিতার পাশাপাশি শরীরে অন্য খাবার গুলো থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া থেকে বঞ্চিত এবং হজমে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। খাবার খাওয়ার আগে চা পান করলেও হজম বাঁধাগ্রস্থ হয় যাতে খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায় না। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পান করা উচিত না। এতে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো হতে পারে।

১. চা খাবার থেকে আয়রন শোষণ করে। কারণ চা বা কফিতে রয়েছে পলিফেনন জেস্টানিন নামক উপাদান যা আয়রন শোষণ করে বা জেস্টানিনরে সঙ্গে আয়রন মিশে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

২. চা শরীরে থায়ামিন বা ভিটামিন বি শোষণ করার ফলে - যা বেরিবেরি রোগের অন্যতম কারণ।

৩. চা শরীরের খাবার থেকে আমিষ ও ভিটামিন শোষণ করে এবং শরীর এই খাবার গুলোকে হজম করতে পারে না।

৪. চায়ের মধ্যে অ্যাসিডাম টেনিকামস ও জেসথিয়োফিলিনস নামক উপাদান রয়েছে যা পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়া নিয়মকে ব্যাহত করে।

 

কখন চা পান করবেনঃ
কিছু নিয়ম মেনে চললে চা পানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যেমনঃ

১. খাবার খাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে অথবা খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে চা পান করা বেশী ভাল হয়।

২. সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের ১ থেকে ২ ঘণ্টা পরে চা বা কফি পান  শরীরের জন্য উত্তম।

৩. রক্তশূন্যতায়, কম বয়স্ক মেয়েরা বা যেসব নারীরা বৃদ্ধ নয় তাদের এই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

৪. যাদের হজমে ও অম্লত্বর সমস্যা রয়েছে তাদেরও এই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে  প্রমানিত।

 

চা অন্ত প্রাণ যারা তারা নিশ্চই খুব খুশী চায়ের সব উপকারী গুনাগুনের বিষয়ে জেনে সবুজ, কালো, সাদা বিভিন্ন রকমের চা পাতা পাওয়া যায়কোন ধরণের চা আপনার পক্ষে বেশি উপকারী হবে, এই বিষয়ে  জন্য ভাল একজন ডায়েটেশিয়ান বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন

এটি মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে অতিরিক্ত চা খাওয়ার নেশা থাকলে, ক্যাফিনের নেতিবাচক প্রভাব বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, এটিও মাথায় রাখতে হবে যে চায়ের এইসব উপকারী গুনাগুণ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে বা রোগ প্রতিরোধে বা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করলেও তা  কোনও সমস্যার সম্পূর্ণ চিকিৎসা নয়। যে কোনও শারীরিক সমস্যা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতেই হবে

হাই প্রেসার কমানোর উপায় reduce high blood pressure

Post a Comment

أحدث أقدم